কোটি নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন গায়েব (আপনারটা দেখুন)

কম-বেশি আমরা সকলেই জানি জন্ম নিবন্ধন বাংলাদেশের জনগণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারি নথি। নাগরিকত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিয়ে, চাকরিসহ বিভিন্ন কাজে এই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এমনকি আপনার কাছে যদি জন্ম নিবন্ধন না থাকে তাহলে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন নিউজ পেপার থেকে জানতে পারি বাংলাদেশের প্রায় কোটি কানিক মানুষের জন্ম নিবন্ধন গায়েব হয়ে গেছে। গায়েব হওয়ার কারণ কি বা যদি আমাদের জন্ম নিবন্ধন গায়েব হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো কিভাবে উদ্ধার করা যায় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে আজকের এই নিবন্ধে।

জন্ম নিবন্ধন তথ্য গায়েব হওয়ার কারণ

জন্ম নিবন্ধন তথ্য গায়েব হওয়ার মূল কারণ হলো, আগের নিবন্ধনগুলো অনলাইনে আপলোড করা হয়নি। ২০১১ সালের আগে সাধারণত আমাদের জন্ম সনদ অনলাইনে ছিলনা বা হাতের লেখা ছিল। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে বাংলাদেশ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অনলাইন সার্ভার চালু করে।

এর ভিত্তিতে যত জন্ম নিবন্ধন অফলাইনে ছিল সবগুলোকে অনলাইনে করার কাজ চালু হয়। মূলত এই কার্যক্রমটা ২০২১ সাল পর্যন্ত চলমান থাকে, কিন্তু ২০২১ সালের পরে নতুন আরেকটি সার্ভার চালু হয়। এর কারণেই যে অফলাইন জন্ম নিবন্ধন ২০২১ সাল পর্যন্ত অনলাইনে করা হয় নাই সেগুলো গায়েব হয়ে গেছে।

যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন ২০২১ সালের আগেই অনলাইন করা হয়ে থাকে। তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই, কেননা এক্ষেত্রে আপনার ২০২১ সালের পরেও জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে পাওয়া যাবে বা তথ্য গায়েব হবে না।

এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে নিবন্ধন অফিসগুলোর উদাসীনতায়ও জন্ম নিবন্ধন তথ্য গায়েব হয়ে গেছে। অনেক নিবন্ধন অফিস পুরনো তথ্যগুলো অনলাইনে আপলোড করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখিয়েছে। ফলে অনেক মানুষের জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনলাইনে নেই।

জন্ম নিবন্ধন তথ্য গায়েব হওয়ার প্রভাব

জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনলাইন সার্ভিস থেকে গায়েব হওয়ায় জনগণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। এটা শিক্ষা, চাকরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বড় প্রভাব ফেলবে। নিচে কিছু প্রভাব দেয়া আছে যেগুলো আপনারা দেখে নিতে পারেন।

বাংলাদেশে স্কুল ভর্তি, পিএসসি/জেএসসি ইত্যাদি সার্টিফিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে দেখা হয় সেটা অনলাইনে আছে কিনা। যদি অনলাইন সার্ভারে এভেলেবল থাকে বা তথ্য গায়েব না হয়, তাহলেই স্কুল ভর্তি বা বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়।

চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এটার বড় একটা প্রভাব পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে জন্ম সনদ নিয়ে থাকে। এর কারণেই কারো জন্ম সনদের তথ্য যদি গায়েব হয়ে যায় তাহলে বিভিন্ন চাকরি পেতে সমস্যায় পড়তে হবে।

বিশেষত বড় প্রভাব পড়ার অন্যতম একটা দিক হচ্ছে নাগরিকত্ব। জন্ম নিবন্ধন একজন ব্যক্তির প্রাথমিক নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে। যদি কারো ন্যাশনাল আইডি কার্ড না হয়, তাহলে প্রাথমিক নাগরিকত্বের প্রমাণ হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন। তাই যদি কারো জন্ম তথ্য গায়েব হয়ে যায় তাহলে নাগরিকত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জন্ম নিবন্ধন তথ্য উদ্ধারের দাবি

সাধারণত কারো জন্ম নিবন্ধন না থাকলে বা গায়েব হয়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হবে এটাই নিশ্চিত। তাই এই তথ্য উদ্ধারের দাবি উঠেছে।

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল মির্জা তারিক হিকমত বলেন, “জন্ম নিবন্ধন তথ্য উদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করছি। আশা করি শিগগিরই এই তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে।”

এক্ষেত্রে আপনার তথ্য গায়েব হয়েছে কিনা জন্ম নিবন্ধন যাচাই মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন। তাছাড়া যদি আপনার জন্ম হয়ে থাকে, তাহলে আপনার নিকটস্থ নিবন্ধন কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারে।

আমারটা গায়েব হয়েছে কি দেখবো কিভাবে?

এর জন্য আপনি জন্ম নিবন্ধন যাচাই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন। তারপর আপনার কাছে থাকা জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে যাচাই করে দেখবেন। যদি অনলাইনে খোঁজে পান তাহলে বুঝবেন তথ্য গায়েব হয়নি।

জন্ম নিবন্ধন গায়েব হলে করনীয় কি?

এক্ষেত্রে আপনার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *