ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে জন্ম নিবন্ধন বের করার নিয়ম

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না, ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে জন্ম নিবন্ধন বের করার নিয়ম সম্পর্কে। বর্তমানে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতেও লাগে মা-বাবার অনলাইন জন্ম সনদ। এখন যদি আপনার অনলাইন জন্ম সনদ না থাকে তাহলে এনআইডি কার্ড থাকা সত্ত্বেও সন্তানের জন্ম সনদ করাতে পারবেন না।

এক কথায় বলতে গেলে আপনি যদি সরকারি সমস্ত সুযোগ সুবিধা পেতে চান তাহলে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন থাকা লাগবেই। বিশেষ করে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম যারা এনআইডি কার্ড করিয়েছে তারা জন্ম নিবন্ধন হওয়ার আগেই ভোটার আইডি কার্ড করিয়ে ফেলেছে।

যার কারণে এখনো পর্যন্ত তাদের জন্ম নিবন্ধন বের করতে পারেনি। তবে আপনার কাছে যদি জন্ম নিবন্ধন নাম্বারটা কে তাহলে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে সেটা আসল না নকল বের করতে পারবেন।

তো এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি আপনার কাছে ভোটার আইডি কার্ডটাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধন কিভাবে বের করবেন? মূলত সেই বিষয়টা নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে লেখালেখি করার চেষ্টা করব। তাই বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ুন আজকের এই নিবন্ধটি। মূলত দুই পদ্ধতিতে আমরা সেটা করতে পারি:-

  • Nid Service একাউন্টে রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে
  • সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা কার্যালয়ে যোগাযোগ করে

ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে জন্ম নিবন্ধন

ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে জন্ম নিবন্ধন বের করতে ‌‌services.nidw.gov.bd এ প্রবেশ করে এন আইডি নাম্বার, জন্ম তারিখ, ঠিকানা এবং সচল মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন। তারপর আপনার প্রোফাইল সেকশন থেকে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার বের করুন।

পুরো প্রসেসটা আপনাদের সুবিধার্থে নিচের স্টেপ বাই স্টেপ বলে দেয়া রয়েছে। যেখান থেকে আপনারা খুব সহজেই প্রত্যেকটা বিষয়ে আলাদা আলাদা ভাবে জানতে পারবেন। তাহলে দেরি কেন আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি। নিচে ভোটার আইডি কার্ড চেক করার বিস্তারিত পদ্ধতি উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।

ধাপ:১# নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইট ভিজিট

আপনার যেহেতু ভোটার আইডি কার্ড আছে, তাই প্রথমত আমাদেরকে জন্ম নিবন্ধন বের করার জন্য এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে হবে। তথা, আপনার এন আইডি একাউন্টে রেজিস্ট্রেশন করে দেখব সেখানে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার আছে কিনা।

visit nidw

এর জন্য প্রথমত আপনাকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে। ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে services Nidw Gov Bd লিখে গুগলে সার্চ করুন। অথবা আপনারা চাইলে সরাসরি এখানে ক্লিক করে ভিজিট করতে পারেন।

ধাপ:২# প্রয়োজনীয় তথ্য দিন

উপরে দেওয়া ওয়েবসাইট ভিজিট করার পর, আপনার সামনে বাটন শো করবে ”রেজিস্টার করুন” ও ”আবেদন করুন” নামে। সুতরাং এখান থেকে আপনাকে রেজিস্টার করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে (কেননা এর আগে আপনি এই ওয়েবসাইটি ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে একাউন্ট খুলেননি)।

fill up form

তারপর আপনার সামনে একটা ফরম ওপেন হবে যেখান থেকে প্রথম ঘরে ভোটার/স্মার্ট কার্ড নাম্বার/ভোটার স্লিপ নাম্বার, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ঘরে (দিন,মাস, বৎসর) এই ফর্মেটে জন্ম তারিখ ও একদম নিচের ঘরে তার ওপরে ঝাপসা ইমেজের মধ্যে যে সংখ্যাটা রয়েছে সেটা দিতে হবে (ক্যাপচা পূরণ করতে হবে)।

ধাপ:৩# ঠিকানা দিন

এখন আপনার সামনে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা দেয়ার জন্য কিছু অপশন শো করবে। সুতরাং পর্যায়ক্রমে আপনার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা দিন। তারপর একদম নিচে একটা পরবর্তী বাটন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করে পরবর্তী স্টেপে যান।

address

মনে রাখবেন, এখানে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় বিভাগ সিলেক্ট করার পরেই জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ক্রমে শো হবে। তাই আপনাকে প্রথমে বিভাগ, তারপর জেলা উপজেলা সিলেক্ট করতে হবে।

ধাপ:৪# মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই

এখন আপনি নতুন আরেকটি পেইজে চলে যাবেন। সেখানে মোবাইল নাম্বার দিয়ে একটা অপশন শো করবে, সুতরাং এখানে আপনার একটি মোবাইল নাম্বার দিন। অবশ্যই মোবাইল নাম্বারটি সচল হতে হবে (যদি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হয়, যেন সেটা আপনি দেখতে পারেন)।

number verification

তারপর ’বার্তা পাঠান’ নামক অপশনে চাপ দিন। সাথে সাথে আপনার দেওয়া নাম্বারে একটা ওটিপি কোড পাঠানো হবে। এইটটি পরবর্তী যে ফেসটা ওপেন হবে সেখানে হুবহু বসাতে হবে (যদি কোন গড়বড় হয় তাহলে ভেরিফাই করানো হবে না)। তাই অবশ্যই যেটি পাঠানো হয়েছে সেটাই বসান।

ধাপ:৫#‌ ফেস ভেরিফাই

এ পর্যায়ে এসে আপনার সামনে একটা কিউ আর কোড সম্বলিত ফেস ওপেন হবে। মূলত আপনাকে এই কিউআর কোডটি NID wallet সফটওয়্যার দ্বারা স্ক্যান করতে হবে। সুতরাং এর জন্য প্রথমত আপনার করণীয় হচ্ছে, প্লে স্টোর থেকে এনআইডি ওয়ালেট নামক সফটওয়্যার টি ডাউনলোড করা।

download nid wallet

ডাউনলোড করে ওপেন করে QR code টি স্কিন করবেন। স্ক্যান করার সাথে সাথে আপনার সামনে অটোমেটিক্যালি ভাবে ক্যামেরা ওপেন হয়ে যাবে। সেখানে আইডি কার্ডের মালিকের ছবি ভেরিফাই করতে হবে লাইভ, সুতরাং চেহারা সোজাসুজি, ডানে-বামে ঘড়ি ভেরিফাই করে ফেলুন টিক মার্ক আসা পর্যন্ত।

এখন আপনাকে একটা পাসওয়ার্ড সেট করার পেজে নিয়ে যাওয়া হবে। সুতরাং আপনি সেট করতে চাইলে পারেন অথবা এড়িয়ে যান বাটনে ক্লিক করুন। মনে রাখবেন, যদি এই ক্ষেত্রে আপনি পাসওয়ার্ড সেট করে ফেলেন পরবর্তীতে আপনার একাউন্টে লগইন করতে সুবিধা হবে।

ধাপ:৬# জন্ম নিবন্ধন বের করুন

এখন আপনি আপনার অ্যাকাউন্টের Dashboard এ চলে যাবেন। সেখান থেকে প্রোফাইল নামক একটা অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করুন। ক্লিক করে একটু নিচে স্ক্রল করার পরে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার নামে একটা অপশন আছে এবং এর নিচেই আপনার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দেখতে পাবেন।

সুতরাং‌ প্রথমত এখান থেকে জন্ম নিবন্ধন নাম্বারটা কালেক্ট করবেন। তারপর আপনাকে জন্ম নিবন্ধন ডাউনলোড করার নিয়ম টা জানতে হবে। এভাবেই জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইন থেকে জন্ম সনদ ডাউনলোড করতে পারবেন।

যদি উপরোক্ত স্টেপ গুলো ফলো করার পরেও জন্ম নিবন্ধন নাম্বার বের করতে না পারেন। তাহলে অবশ্যই আপনাকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা তে যোগাযোগ করে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার বের করতে হবে বা নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে না ফেলে

অনেক সময়, আপনি যদি ভোটার আইডি কার্ড করার সময় জন্ম নিবন্ধন না দিয়ে থাকেন (বিশেষ করে যারা সর্বপ্রথম জন্ম নিবন্ধন করিয়েছিলেন)। সে ক্ষেত্রে আপনার জন্ম নিবন্ধন এনআইডি সেকশনে শো করবে না। অবশ্যই সে ক্ষেত্রে ভিন্ন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সাধারণত জন্ম নিবন্ধন এনআইডি সেকশন শো না থাকতে পারে।

  • Nid করানোর সময় জন্ম নিবন্ধন না দেয়া
  • এখনো পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধন না হওয়া

এক্ষেত্রে আপনার একটা কাজ করতে পারেন, আপনাদের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কার্যালয় যোগাযোগ করবেন। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে গিয়ে বলবেন যে, আমার আইডি কার্ড আছে কিন্তু জন্ম নিবন্ধন খুঁজে পাচ্ছি না।

তখন তারা কারণটা বের করে সে অনুযায়ী আপনার কাজটা করে দিবে। যদি এখনো পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধন না হয়ে থাকে তাহলে ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে জন্ম নিবন্ধন বের করা অসম্ভব। তাই সে ক্ষেত্রে নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন বাংলা থেকে ইংরেজি

আর অন্যদিকে যদি, আপনার জন্ম নিবন্ধন আছে কিন্তু ভোটার হওয়ার সময় সেটা দেন নাই। সে ক্ষেত্রে যেহেতু nid section এ জন্ম নিবন্ধন নাম্বার শো করবে না। তাই অবশ্যই পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে আপনার NID Account এ যেন শো করে এই ব্যবস্থা করতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *